পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর আদ্যোপান্ত-

February 04, 2023

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর আদ্যোপান্ত-

বর্তমান যুগে নিজেকে আরও একটু এগিয়ে রাখতে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার অন্যতম সেরা একটি পছন্দ। আপনাকে অন্যদের থেকে আরো একধাপ এগিয়ে রাখতে পারে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট । আসুন জেনে নেওয়া যাক, পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর আদ্যোপান্ত-

 

বর্তমান সময়ে,পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে আমরা এমন একটি যুগে বসবাস করছি যেখানে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট না করলে, আমরা শুধু পিছিয়েই পড়বো না, ধীরে ধীরে সময়ের আবর্তনে বিলীনও হয়ে যাব। পোর্টফোলিও মূলত আমাদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং গুণাবলীর সম্মিলিত একটি প্রতিচ্ছবি।

 

পোর্টফোলিও কি?

 পোর্টফোলিও হচ্ছে আমাদের কর্মজীবনের একটি প্রতিচ্ছবি। প্রফেশন অনুযায়ী পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের এই যুগে পোর্টফোলিও সম্পর্কে না জানলেই নয়। পূর্ববর্তী কাজের ধরন,প্রক্রিয়া,ফলাফল কিংবা পারদর্শিতা উপস্থাপন করতে একটি পোর্টফলিওর বিকল্প নেই। কোন ক্লায়েন্ট,কোন কাজের নমুনা না দেখে ক্যান্ডিডেটকে কাজ দিতে চাইবেন না বা কাজে নিয়োগ করতে চাইবেন না। তাই পূর্বের ইতিমধ্যে শেষ করা কাজগুলোর স্থিরচিত্র বা ভিডিও এবং সামনের যে কাজগুলো করার প্লান রয়েছে,এমন সকল কাজের ডেমো গুলো যদি পোর্টফোলিওতে সাজিয়ে রাখা যায়, যাতে ক্লায়েন্ট সে কাজগুলো দেখে কোন ব্যক্তির দক্ষতা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পায়, এক্ষেত্রে এটি কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার প্রমান হিসেবে কাজ করবে।

 

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কি?

একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে ওয়েব পাতা এবং সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর একটি সংগ্রহ যা একটি সাধারণ ডোমেইন নাম দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং অন্তত একটি ওয়েব সার্ভারে প্রকাশিত হয়।অর্থাৎ পোর্টফলিও ওয়েবসাইট বলতে মূলত বোঝায় এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে ব্যক্তিগত কাজের অভিজ্ঞতা, প্রক্রিয়া, ফলাফল, পারদর্শিতা ইত্যাদি ভিজুয়ালভাবে উপস্থাপন করা যায়,যাতে নিয়োগকারী কোন ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে এটি বোঝাতে সহায়ক হয়। একটি পোর্টফোলিওতে সিভি বা রিজিউমেতে উল্লেখিত বিষয়গুলোর বিপরীতে সরাসরি ভিজ্যুয়াল কিছু প্রমাণ উল্লেখিত থাকে ধারাবাহিকভাবে। কোন ব্যক্তি যে তার সেরা কাজগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখল একটি ওয়েবসাইটের এক জায়গায়,এটিই হচ্ছে তার পোর্টফোলিও। এ ওয়েবসাইট দেশের গণ্ডি পার করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কর্ম ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিকে রিপ্রেজেন্ট করে।

 

সিভি বা রিজিউমে ভার্সেস পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট:

 

সিভি বা রেজিউমে এর সাথে পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এগুলোর তুলনামূলক পার্থক্য করা হলোঃ

১.সিভি বা রেজিউমের তুলনায় পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের জন্য অধিক উপযোগী।

২. কাগজে লিখিত সিভি বা রেজিউমে আপডেট করতে গেলে নতুন করে লিখতে হয়, অথচ পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে শুরু থেকে নতুন করে লেখার কোন প্রয়োজন নেই।

৩. পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে স্থিরচিত্র, ভিডিও, কাস্টমার রিভিউ এবং বিভিন্ন অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে নিজের কাজের দক্ষতাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায় যা সিভি বা রেজিউমে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

৪. প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্বে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের দেশের গণ্ডি পার করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যত দ্রুত প্রসার সম্ভব, সিভি বা রেজিউমে তা সম্ভব নয়।

৫. বর্তমান বিশ্বে সিভি বা রেজিউমের তুলনায় একটি সুসজ্জিত পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

৬.সিভি বা রিজিউমেতে কিছু অপূর্ণতা থেকে যায়, যেটা পোর্টফোলিওতে পূরণযোগ্য।

৭.বর্তমান এই অনলাইন এবং প্রযুক্তির যুগে ভালো কাজ পেতে এবং নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য সিভি বা রেজিউমে তুলনায় একটি পোর্টফোলিও সাইট খুবই সহায়ক।

 

পোর্টফোলিও: যখন আপনি অনেকগুলো প্রজেক্টে কাজ করেছেন তখন সবগুলো প্রজেক্ট মিলে গঠিত হয় আপনার পোর্টফোলিও। অথবা আপনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল মিলে গঠিত হবে আপনার গ্রুপ পোর্টফোলিও।

 

পোর্টফলিও ওয়েবসাইট যেভাবে সাজাবেন:

 

 অনেক রিসোর্স রয়েছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস, উইক্স, Weebly ইত্যাদি। এছাড়াও HTML,CSS, Bootstrap দিয়েও কোড করে নিজের জন্য একটি সাইট বানানো যায়। তবে ফ্ল্যাক্সিবিলিটি, রিলায়াবিলিটি এসব বিষয় চিন্তা করলে সিএমএস বা Content Management System গুলো হবে সবচেয়ে ভালো অপশন। আর CMS এর কথা আসলে এক বাক্যে যেটি বলতে হয় তা হলো WordPress

 

যে যে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

১. লোগো: সুন্দর,ছোট এবং আকর্ষণীয় একটি লোগো ব্যবহার করা যেতে পারে,

২. প্রোফাইল: পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, বর্তমান কাজ এবং দক্ষতার সংমিশ্রণে একটি সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করা যেতে পারে,

৩. সুন্দর একটি নাম: নিজের নামের পরিবর্তে কাজের সাথে সম্পর্কিত ছোট এবং আকর্ষণীয় একটি নাম ব্যবহার করা যেতে পারে,

৪. ট্যাগলাইন: প্রচারণায় সাহায্য করবে এবং কাজের সাথে সম্পর্কিত একটি ট্যাগ লাইন ব্যবহার করা যেতে পারে,

৫. আকর্ষণীয় স্থির চিত্র,ভিডিও অথবা কোন অ্যাটাচমেন্ট: উক্ত বিষয়াদি একটি পোর্টফলি ওয়েবসাইটে যুক্ত করলে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে,

৬. অতীতের কোন কাজের নমুনা উপস্থাপন করা যেতে পারে,

৭. পরিকল্পিত নতুন কোন কাজের ডেমো দেখার ব্যবস্থা থাকতে পারে,

৮. বিশ্বস্ত কাস্টমারদের ভরসাযোগ্য রিভিউ উল্লেখ করা যেতে পারে,

৯. Contact Info: নজরকাড়া স্থানে যোগাযোগের বিষয়াদি উল্লেখ করা যেতে পারে,

১০. দায়িত্বশীলতা: দৈনন্দিন ইমেইল চেক করা এবং রিপ্লাই দেওয়া পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

১১. ডোমেইন নির্বাচন:ডোমেইনের ক্ষেত্রে কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নাম বাছাই করে .com ডোমেইন নেওয়া যেতে পারে। কারণ, যদি ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ হয় তাহলে এই ডোমেইন টি একটি ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ করবে।

১২. পোর্টফোলিও: এখানে সকল ভালো ভালো কাজের স্যাম্পল রাখা যায় ছবি,ভিডিও এবং এটাচমেন্টসহ।যাতে মানুষ উক্ত ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে ধারণা পায়।

১৩. ব্লগ: পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে যদি ব্লগ সেকশন যুক্ত করা যায়, এবং তাতে যদি নিয়মিত লেখালেখি করা হয় তাহলে এটি ওয়েবসাইটটিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে!

 

বেসিক কিছু জানা থাকলেই রিসার্চের মাধ্যমে বাকিটা লেখা যায়।তাই যখন কেউ পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের কাজ, সমস্যা সমাধান এর কৌশল ইত্যাদি তুলে ধরে,তখন কাউকে যেচে গিয়ে কিছু বলতে হয় না। বরং তারা নিজেরাই যোগ্যতার সঠিক বিচার করতে পারে। এমনও হতে পারে কারো নিয়মিত ব্লগ লেখালেখি দেখে কেউ তার ওয়েব সাইটের ফ্রীলান্স আর্টিকেল রাইটার হিসেবে ব্লগ রাইটারকে আহ্বান করলো।

 

সময়োপযোগী অবস্থান তৈরিতে প্রযুক্তি ভিত্তিক বিশ্বে ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও বা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের গুরুত্বঃ

 

বর্তমান বাজারে শুধু চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করলেই হবে না বরং এর প্রচার করতে হবে আর নিজের প্রচার ও প্রসারের জন্য ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে নিজের একটা পোর্টফোলি ওয়েবসাইট হচ্ছে অন্যতম সেরা উপায়।আপনি যতই কাজ করেন সেসবের কোন ডকুমেন্টেশন বা ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন না থাকলে কেউ আপনার কথা বিশ্বাস করবে না।এই সেকশনে আপনি নতুন কী কী শিখছেন, কী কী শেখার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো স্টেপ বাই স্টেপ তুলে ধরুন। আপনি কীভাবে শিখতে পছন্দ করেন, কোন লার্নিং টেকনিক আপনি ফলো করেন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরুন।

মনে করুন,আপনি একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটর। আপনি এখন চাইছেন একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হতে। এর জন্য কোথা থেকে কী শিখছেন, সিলেবাস কীভাবে নির্ধারণ করছেন, কত সময় নিয়ে গোল এচিভ করছেন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরুন। এতে করে দুটো লাভ হবে। নতুন কোনো কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বাকি অনেক জনের থেকে এটাএগিয়ে রাখবে। কারণ হিসেবে এই যে আপনার শেখার আগ্রহ, শেখার পদ্ধতি এই ব্যাপারগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর কর্মকর্তাদের খুবই আকৃষ্ট করে।

আপনার দক্ষতার চেয়ে আপনার শেখার আগ্রহ যেকোনো ক্ষেত্রে আপনাকে বহুগুণ এগিয়ে রাখবে। আরেকটি হচ্ছে একটি ব্যক্তিগত নোটবুক তৈরি হয়ে যাবে। এখানে আপনি নিজের কাজের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারবেন। কোনো বিষয় লিখে রাখলে সেটি ভূলে যাবেন না। অনেক দিন পরও যদি একবার চোখে পরে, তখন মনে হবে “হ্যাঁ আমার ঐ বিষয়ে শেখা উচিৎ”। "প্রচারেই প্রসার" এ প্রবাদের সঙ্গে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। অনেকের সুপ্ত প্রতিভার প্রসার হয় না প্রচারের অভাবে। একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট হতে পারে এর উত্তম সমাধান।

পরিশেষ বলা যায়, প্রফেশন অনুযায়ী পোর্টফোলিও সাইট বিভিন্ন ধরনের হলেও বর্তমান এই অনলাইন এবং প্রযুক্তির যুগে ভালো কাজ পেতে এবং ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজস্ব ব্রান্ডিং এর জন্য কনটেন্ট রাইটার, ফটোগ্রাফার সহ যেকোনো প্রফেশনে একটি পোর্টফলিও সাইট খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

Tagged with:
Business Landing

Recent Posts

Post a comment

Full Name
Message