আসুন জেনে নিই , Open AI চ্যাট জিপিটি কী ?
আধুনিক বিশ্বে সব থেকে আলোচিত বিষয়টি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এ আই দ্বারা গঠিত চ্যাটজিপিটি এক ধরনের চ্যাটবট যা মানুষের সাথে প্রাকৃতিক ভাষার অনুকরণ করতে পারে এবং জটিল ও কঠিন সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। চ্যাটজিপিটি কি, এর ইতিহাস কী, এর কাজ কি ,এটি কি গুগলের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করবে, নাকি মানুষের চাকরি থেকে বিতাড়িত করে দেবে? আসুন বিস্তারিত বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
CHATGPT এর পরিচয়
CHATGPT হলো একটি কনভার্সেশনাল চ্যাটবট। এর ফুলফর্ম হলো Generative pre-trained transformer. চ্যাট-জিপিটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাষা মডেল যা OpenAI দ্বারা আবিষ্কৃত। এটি একটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেস বা প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ টুলস। এটি মানুষের সাথে প্রাকৃতিক ভাষায় কথোপকথন অনুকরণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ১৭৫ বিলিয়নের বেশি প্যারামিটার সহ এখন পর্যন্ত তৈরি করা বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত ভাষা মডেল গুলোর মধ্যে একটি। ChatGPT ট্রান্সফরমার নামক এক ধরণের নিউরাল নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে Google এ একটি গবেষণাপত্রে প্রথম চালু করা হয়েছিল।
একটি ভাষা মডেল হিসেবে চ্যাটজিপিটি মানুষের মতো ভাষা বুঝতে এবং তৈরি করতে পারে। এটি বিভিন্ন ধরনের বই, নিবন্ধন এবং অন্যান্য লিখিত সামগ্রী সহ ইন্টারনেট থেকে প্রচুর পরিমাণে পাঠ্য ডেটার উপর প্রশিক্ষিত একটি সার্চ টুল। যা সহজেই যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তের মধ্যে লিখিতভাবে দিতে পারে।
CHATGPT এর ইতিহাস
২০১৫ সালে স্যাম অল্টামন ও ইলন মাস্ক একটি শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করে যা OpenAI নামে পরিচিত। OpenAI এর উদ্দেশ্য ছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়টা সবার মাঝে উন্মুক্ত করা এবং এআই বিষয়টি সবার সামনে নিয়ে আসা এবং বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এরপর OpenAI আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে বিভিন্ন রিসার্চ শুরু করে।
কিন্তু তিন বছর পর ২০১৮ সালে কিছু কারণবশত ইলন মাস্ক OpenAI ছেড়ে দেয়। ইলন মাস্ক OpenAI ছেড়ে দেওয়ার পর OpenAI ইউনিক ইনভেনশন সবার সামনে নিয়ে আসে, আর সেটা ছিলো Dale-E-2 । এটি ছিলো একটি ইমেজ টেকনোলজি এবং যেটি খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। Dale-E-2 সফলতার ঠিক এক বছর পর ৩০ নভেম্বর ২০২২ সালে OpenAI চ্যাটজিপিটি লঞ্চ করে। একটি একটি কনভারসেশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। চ্যাটজিপিটিকে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে পারবে। বর্তমানে এটা শুধু লিখিত কথার উত্তর এবং কোড দেয়। এটি বিভিন্ন ধরনের গান, কবিতা, ব্লগ পোষ্ট, আর্টিকেল মুহূর্তের মধ্যে লিখে দিতে পারবে। চ্যাটজিপিটি এমন একটি ইনভেনশন যা মানুষকে রিপ্লেস করতে পারে। যেটা আগে কখনো ঘটেনি।
CHATGPT যেভাবে কাজ করে
চ্যাটজিপিটির কাজ – এর প্রাথমিক কাজ হলো প্রাপ্ত ইনপুটের উপর ভিত্তি করে মানুষের মতো ভাষা তৈরি করা। চ্যাটজিপিটি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে যেমন মানুষের মতো ট্যাক্স তৈরি করা, প্রশ্নের উত্তর দেয়া, সারসংক্ষেপ করা, কোডিং করা বিভিন্ন আর্টিকেল লেখা আরো অনেক। তবে এর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু কাজ চ্যাট জিপিটি করে থাকে যেমন,
টেক্সট জেনারেশন: চ্যাট জিপিটি প্রদত্ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মানুষের মতো ট্যাক্স তৈরি করতে পারে। এটি সৃজনশীল লেখা পণ্যের বিবরণ এবং এমনকি নিউজ আর্টিকেল লিখতে পারে।
ভাষা অনুবাদ: চ্যাটজিপিটি এক ভাষা থেকে অন্য ভাষার টেক্সট অনুবাদ করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে ডেটার উপর প্রশিক্ষিত এবং এটি নির্ভুলতার সাথে টেক্সট এর অনুবাদ করতে পারে।
কোডিং : চ্যাট জিপিটি কোডিংও করতে পারে। আপনি এটিকে যেমন ইন্সট্রাকশন দিবেন বা তাকে যেভাবে প্রশ্ন করবেন আপনাকে ঠিক সেভাবেই সে কোডিং করে দেবে।
প্রশ্নের উত্তর: চ্যাট জিপিটি তার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এটি অতি নির্ভুলতার সাথে কঠিন ও সহজ প্রশ্নের উত্তর দেয় ।
অনুভূতির বিশ্লেষণ : চ্যাটজিপিটি টেক্সটর এর যেকোনো অংশের অনুভূতি বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেটি ইতিবাচক না ইতিবাচক তা বুঝতে পারে। এটি দ্বারা কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদের পণ্যের প্রতি গ্রাহকের মনোভাব বুঝতে পারা যাবে।
চ্যাটবট: চ্যাটজিপিটি এমন একটি চ্যাটবট তৈরি করতে পারবে যা ব্যবহারকারীদের সাথে কথা বলতে পারবে এবং ব্যবহারকারীর মনের ভাব বুঝতে সক্ষম হবে এটি যেকোন বিষয়ে তথ্য ও সহায়তা প্রদান করতে পারে।
কনটেন্ট কিউরেশন: চ্যাটজিপিটি কন্টেন্ট কিউরেশনের জন্য সাহায্য করতে পারে। বড় আর্টিকেল সংক্ষিপ্ত করে লেখা, মূল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করা এমনকি ওই আর্টিকেল সম্পর্কিত পরামর্শ দিতে পারে।
CHATGPT এর বৈশিষ্ট্য
এ আই ভাষার মডেল হিসেবে চ্যাটজিপিটি এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে প্রাকৃতিক ভাষা রেসপন্সের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার করে তোলে। এর কিছু মূল বৈশিষ্ট অন্তর্ভুক্ত:
ভাষা বোঝা: চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর ভাষার ইনপুট বুঝতে পারে এবং ব্যাখ্যা করতে পারে।
রিলেভেন্ট সচেতনতা: চ্যাটজিপিটি যেকোনো কনভারসেশন এর প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে এবং রেসপন্স ও জানাতে পারে।
বৃহৎ জ্ঞানভান্ডার: চ্যাটজিপিটিকে প্রচুর পরিমাণে ডেটের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যা এটিকে বিশাল জ্ঞানের ভিত্তিতে এক্সেস দেয় যার মাধ্যমে যে কোন বিষয়ে প্রশ্নের মুহূর্তের মধ্যে সে উত্তর দিতে পারে।
ওপেন সোর্স: চ্যাটজিপিটি হচ্ছে একটি ওপেন সোর্স টুল। যেখানে ডেভলপাররা বা গবেষকেরা এটিকে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশোধন ও আরো উন্নত মানের করতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে চ্যাটজিপিটির বৈশিষ্ট্য গুলো প্রাকৃতিক ভাষার প্রসেস ও যোগাযোগের একটি পাওয়ারফুল টুল।
এ আই মডেল হিসেবে চ্যাটজিপিটি সুবিধার রয়েছে যেমন:
প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ: চ্যাটজিপিটির ভাষা সম্পর্কে অনেক ধারণা রয়েছে যার দরুন এটি প্রাকৃতিক ভাষার প্রশ্ন বুঝতে পারে এবং মানুষের মতো রেসপন্স করতে পারে।
ধারাবাহিকতা: চ্যাট জিপিটি এর প্রতিক্রিয়ার সাথে অনেক সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি মানুষের মত বিরক্ত বা ক্লান্ত হয় না। এটি ২৪/৭ প্রতিনিয়ত তার সেবা দিতে পারে।
গতি: চ্যাট জিপিটি খুব দ্রুত প্রশ্নগুলো বুঝতে পারে এবং উত্তর দিতে পারে ।যেকোনো তথ্য পাওয়ার এবং সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি দক্ষ টুল।
এছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন এটি প্রচুর পরিমাণে অনুরোধ পরিচালনা করতে পারে এবং সঠিক উত্তর দিতে পারে। চ্যাটজিপিটি যেহেতু বিশাল ডেটার দ্বারা প্রশিক্ষিত সফটওয়্যার সেহেতু এটি কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে। এটি কোডিং ,কনটেন্টরাইটিং, ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল লেখা সব ধরনের কাজ খুব সহজেই করতে পারে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানব এজেন্টের একটি বড় দল নিয়োগ না নিয়ে চ্যাটজিপিটি সাহায্যে এই কাজগুলো নির্ভুলভাবে অতি দ্রুতগতির সাথে খুব সহজে সম্পাদন করা যেতে পারে।
চ্যাটজিপিটি কি গুগলকে রিপ্লেস করবে?
চ্যাটজিপিটি লঞ্চ হওয়ার পর থেকে এ দক্ষতা দেখে অনেকেই হয়তো এটা ভাবছে ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি গুগল কে রিপ্লেস করবে কিনা? উত্তরটি হচ্ছে না চ্যাটজিপিটি গুগলকে রিপ্লেস করবে না। চ্যাট জিপিটি এবং গুগল উভয়েই অনলাইন পরিষেবা দিয়ে থাকলেও তাদের কাজের উদ্দেশ্য এবং এদের এবিলিটির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে উভয়ই ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বিষয় তথ্য আদান প্রদান করে।
চ্যাটজিপিটি হলো একটি কনভারসেশনাল এআই ভাষার মডেল যা যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। ব্যবহারকারীদের সাথে প্রাকৃতিক ভাষায় কথা বলার জন্য প্রচুর পরিমাণে ডেটার উপর প্রশিক্ষিত করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের জন্য তথ্যপূর্ণ বানিয়ে একটি তৈরি করা হয়েছে। আর অন্যদিকে গুগল হচ্ছে একটি সার্চ ইঞ্জিন যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোনো বিষয় তথ্য পেতে সাহায্য করে। চ্যাটজিপিটিকে কোন প্রশ্ন করলে সে মুহূর্তের মধ্যে একিউরেট উত্তর দেয় এবং সে মানুষের অনুভূতিও বুঝতে সক্ষম। কিন্তু গুগলকে কোন প্রশ্ন করলে ও সে ওই বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট প্রদর্শন করে এবং নিজ পছন্দমতো আমাদের উত্তর বেছে নিতে হয়। কোন বিষয়ে তথ্য পেতে গুগলের থেকে চ্যাটজিপিটি অনেক বেশি সুবিধাজনক। গুগলের মতো এটি কোন ওয়েবসাইট শো করে না বরং এটি ব্যবহারকারী যেকোনো প্রশ্নের উত্তর ইউনিক এবং নির্ভুল ভাবে দেয়।
চ্যাট জিপি থেকে বিভিন্ন তথ্য খোঁজার জন্য এবং প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর দেয়ার জন্য তৈরি করা হলো এটি গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনকে রিপ্লেস করার জন্য তৈরি করা হয়নি। কিন্তু এটা অনুমান করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে এটি গুগলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পরিশেষে,
চ্যাটজিপিটির মোটামুটি সব কাজেই দক্ষতা রয়েছে। এটি কনটেন্ট রাইটিং থেকে শুরু করে সব ধরনের কোডিং করতেও দক্ষ। এটা মনে করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতের ৪ জিবি আপডেট ভার্সন আসার পর অনেক মানুষের চাকরির চলে যেতে পারে ইনফ্যাক্ট এখনো অনেক মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ছোট বড় সব কোম্পানিতে ৫০ জন এমপ্লয়ির মধ্যে ২৫ জন থাকবে ।মিড লেভেলের এমপ্লয়ীরা অর্থাৎ যারা তাদের ফিল্ডে খুব ভালোও নয় আবার খুব বেশি খারাপ নয় তারা এআই অটোমেশনের সাথে রিপ্লেস হয়ে যেতে পারে। কেননা একজন মানুষের যে কোন কাজ করার জন্য যতটুকু সময় এবং দক্ষতার প্রয়োজন তার থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে চ্যাটজিপিটি কাজটি করে দিতে পারবে এবং তা হবে ইউনিক এবং নির্ভুল।